পরিবার ও নিজের অর্থনৈতিক সিকিউরিটির জন্য যৌবন ও জীবনের মূল্যবান সময় একাএকা জীবন যাপন করার নাম প্রবাস।

দেশে চাহিদা অনুযায়ী কর্মসংস্থান না থাকায় নিজেকে বেকার অভিশাপ থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্য ১ কোটিরও বেশি বাংলাদেশী আজ প্রবাসী।

সেই অর্থনৈতিক যোদ্ধা, রেমিট্যান্স যোদ্ধা, পরিবারের সুখের এক মাত্র ব্যাক্তি যার ত্যাগের বিনিময়ে ভালো থাকত পরিবারের সকলে, এমন একজন রেমিট্যান্স যোদ্ধা ওবায়দুল শেখ।

যশোর জেলায়, মনিরামপুর উপজেলা রোহিতা শেখ পাড়ায় জন্ম তার।
তিনি ছিলেন মালায়েশিয়া প্রবাসী রেমিটেন্স যোদ্ধার সফল একজন অভিবাসী কর্মী।

পিতার মৃত্যুর পর ছোট ছোট ছয় ভাইবোনের সংসারটা মুখ থুবড়ে পড়লো। পাওয়ানাদারা রাতের ঘুম নষ্ট করে দেয় তাদের দাপটে রাতের অন্ধকারে পালানোর অবস্থা।

অল্প বয়স ফুল প্যান্ট পরার বয়স হয়নি হাফপ্যান্ট পরা মেঝ ছেলে ওবায়দুল নিজের ভাবনা ভুলে গিয়ে লেখাপড়া ছেড়ে স্থানীয় বাজারে হোটেলে চাকুরি নিল।
হোটেলে সংস্কারে ছাদ সেন্টারিং এর বাঁশ তক্তা দিয়ে রান্না হয়, ওবায়দুল সকালে ছায় ফেলারনোর সময় পেরেক লোহা কুড়িয়ে সঞ্চয় করে বিক্রি করে, তাতে দু’পয়সা হাতে আসেত।

মাস শেষে ছোট ভাই দোকানে গেলে একমাসের তেল, ঝাল, লবণ কিনে দেয়। এভাবে একবেলা খেয়ে সংসার চলে।

চাকুরি ছেড়ে ওবায়দুল রোহিতা বাজারে চা সিঙ্গাড়া পুরির দোকান দিল, সেখানো টিকে থাকাটা ওবায়দুলের জন্য কঠিন হয়ে দাড়ালো, অসম্ভব বাকি যায় তবুও হাতে কিছু পয়সা জমলো। মাঠের সামান্য জমি বন্ধক রেখে সুখের সন্ধানে মালায়েশিয়া চলে গেল। যৌবনের অপ্রতিরোধ্য শক্তি বিদেশের মাটিতে বিনিয়োগ করে, রাতদিন এক করে মুটভোর টাকা আসে। ১৩ বছর অমানুষিক পরিশ্রম করে ছোট্ট ভাই কে দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় লেখাপড়া করাল, এমনি সরকারি চাকরিতে পেতেও রয়েছে তার অসামান্য অবদান বড় ভাই সহ সকলে আজ যে যার মত প্রতিষ্ঠিত। গত ১৩ বছরে মাত্র তিনবার দেশে এসেছে। সবার জোরজবরধস্তিতে বিয়েও করেছিল। ফুটফুটে একটা মেয়ে হয়েছে কিন্তু তিন বছর হয়ে গেল মেয়ের মুখ দেখা হয়নি। সংসারে অভাব দূর হয়েছে, অতএব আর বিদেশ নয় দেশেই চলে যাবে ওবায়দুল। অগাস্ট মাসে বিমানের টিকি পেলে চলে যাবে দেশে, ভাগের নির্মম পরিহাস একেবারে চিরোবিদায় নিয়ে চলে গেলেন আর কোন দিন ফিরে আসবেন না। মহামারী করোনা, কঠোর লকডাউন চলছে মালায়েশিয়ায়। বাড়িতে কোরবানী দিয়েছে, ওবায়দুলের জন্য ফ্রিজে করে গোশ রাখা হয়েছে। বাড়িটা রংচং করে সাজানো হচ্ছে। বাজারে একটা জায়গা ঠিক করা হয়েছে, ওবায়দুল সেখানে হোটেল করে ক্যশিয়ারের চেয়ারে বসে মনের সুখে পান চিবাবে। এসুখ কপালে সইলো না। মৃত্যুর আগে পানি পানি করে চিৎকার করেও কাউকে কাছে পেল না প্রবাসী ওবায়দুল । অবৈধ এবং করোনা রোগী বিধায় লাশটাও দেশে ফিরে এল না। সুখের সংসার কান্নায় ভাসছে।

প্রবাসে করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাজার হাজার প্রবাসীর মৃত্যুর সাথে সাথে হাজার হাজার পরিবারের স্বপ্নের মৃত্যু হচ্ছে।